Tarapith temple, ফের তারাপীঠ মন্দিরের অনিয়ম নিয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ সেবাইতদের একাংশের

আশিস মণ্ডল, রামপুরহাট, ২৪ ডিসেম্বর: সেবাইত সংঘের নিয়মকানুন ভেঙে গায়ের জোরে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে একই কমিটি। বিশেষ দর্শনের জন্য পুণ্যার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ মন্দিরের নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে রাখা হচ্ছে না। বিজেপির পর এবার তারাপীঠ মন্দির কমিটির বিরুদ্ধে এমনই গুরুতর অভিযোগ তুললেন মন্দিরেরই সেবাইত নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায়।

প্রসঙ্গত, দিন দুয়েক আগে তারাপীঠ মন্দির, শ্মশান এবং তারাপীঠ- রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের অনিয়ম নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা। তাঁর অভিযোগের পাল্টা বক্তব্যে দেয় মন্দির কমিটি। এনিয়ে তারাপীঠ মন্দিরকে নিয়ে শুরু হয়েছে বাকযুদ্ধ। মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, “অনিয়ম নিয়ে মন্দিরের সেবাইতদের কোনো অভিযোগ নেই। বিজেপি রাজনৈতিক কারণে মন্দিরের বদনাম করছে।”

তারাময়বাবুর সাংবাদিক সম্মেলনের দু’দিন পরেই এবার মন্দিরের অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ তুললেন সেবাইতদের একাংশ। নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রয়াত শিবশঙ্কর মুখোপাধ্যায় তারামাতা সেবাইত সংঘ তৈরি করেছিলেন। নিয়ম করেছিলেন, একজন সর্বোচ্চ তিন বছর সংঘের সভাপতি থাকতে পারবেন। কিন্তু এখানে ১৫ বছর ধরে একই ব্যক্তি পদ আঁকড়ে বসে রয়েছে। মন্দিরের অনিয়ম দেখে জেলা শাসক বিধান রায় একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে দেন। সেই কমিটিতে আমার নাম থাকলেও কোনদিন আমাকে ডাকা হয়নি।”

নিখিলবাবুর আরো অভিযোগ, মন্দিরে কোটি কোটি টাকা আদায় হলেও সেই টাকা মন্দিরের অ্যাকাউন্টে রাখা হয় না। উন্নয়নের কাজ করা হলেও সেবাইতরা সকলে জানতে পারেন না। তাছাড়া মন্দিরের যা আয় হয় সেই টাকায় মন্দিরের সার্বিক উন্নয়ন করা যাবে। কিন্তু সেটা না করে তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদকে দিয়ে উন্নয়ন করিয়ে গোলমালে টাকা আত্মসাৎ করাই মূল উদ্দেশ্য। অপ্রয়োজনীয় ভাবে মন্দির চত্বরের বেশ কয়েকটি মন্দিরকে ভেঙ্গে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দোতলা অফিস ঘর পাঁচ বছরের মধ্যে ভেঙ্গে নতুন করে একতলা করা হলো কার স্বার্থে? সোলার সিস্টেম ভোগ ঘর নির্মাণের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু সেটা বাস্তবে রূপ পায়নি। ভালো ভোগ ঘর ভেঙ্গে দিয়ে মন্দিরের পাশে ভোগ ঘর নির্মাণ করে মন্দিরের সৌন্দর্য নষ্ট করা হয়েছে। প্রতিবাদ করতে গেলে প্রশাসন এক শ্রেণির সেবাইতদের কথায় প্রতিবাদী সেবাইতকে থানায় কিংবা মহকুমা শাসকের অফিসে বসিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। গত একবছরে মন্দিরের কয়েক কোটি টাকার কোনো হিসাব নেই। হিসাব চাইতে গেলে জীবিত কুন্ড সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। অথচ উন্নয়ন পর্ষদ দাবি করছে, জীবিত কুন্ড তারা সংস্কার করছে। এভাবে মন্দিরের টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। শ্মশানে গাছ লাগানোর জন্য সাড়ে পাঁচশো টাকা করে নেওয়া হয়। যার পরিমাণ কয়েক লক্ষ টাকা। তারও কোনো হিসাব নেই। ভাদ্র মাসের অমাবস্যায় শ্মশানে যজ্ঞ করার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করা হয়। কিন্তু তার কোনো হিসাব নেই। প্রশাসন এবং এক শ্রেণির তৃণমূল নেতা মন্ত্রীদের কথায় দুর্নীতি করে চলেছে। আমরা মন্দিরের স্বার্থে লড়াই চালিয়ে যাব।

অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন তারাময় মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “উনি বিজেপি করেন। তাই বিজেপির মতো করে কথা বলছেন। উনি চাইলে আমরা হিসাব দেব। শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তিনি বদনাম ছড়াচ্ছেন। বিজেপি নেতা ধ্রুব সাহা যে মিথ্যা অভিযোগ করেছিলেন তাকে ঢাকতে এই অভিযোগ করেছেন নিখিলবাবু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *