দেরিতে পৌছনোয় জীবন বিজ্ঞান পরীক্ষা দিতে পারলো না এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ ওই ছাত্র

পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ২৮ ফেব্রুয়ারি: নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে না পৌছানোয় জীবন বিজ্ঞান পরীক্ষা দিতে পারল না এক হতদরিদ্র মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। অনেক কাকুতি মিনতিতেও মন গললো না স্কুল কর্তৃপক্ষের। মঙ্গলবার দুপুরে এই ঘটনাকে ঘিরে রীতিমতো আলোড়ন পড়েছে বালুরঘাট শহরে। এদিকে এই ঘটনার পর থেকেই আশ্চর্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন বালুরঘাট ললিত মোহন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই হতদরিদ্র মেধাবী পড়ুয়া। খবর লেখা পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পায়নি পরিবারের লোকেরা।

জানা গেছে, এদিন ছিল মাধ্যমিকের জীবন বিজ্ঞান পরীক্ষা। দুপুর ১২ টা থেকে পরীক্ষার সময়সূচি থাকলেও বালুরঘাট ললিত মোহন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ভূষণ কর্মকার কিছুটা দেরিতে পৌছেছিল তার পরীক্ষাকেন্দ্র বালুরঘাট হাইস্কুলে। আর এতেই যেন কিছুটা চটে গিয়েছিলেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। জীবনে প্রথম ও সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় বসেছেন, একটু দেরি হয়ে গেছে স্যার। আসলে কাজ সেরে আসতেই একটু দেরি হয়েছে স্যার। এমন সব কথা বলে কাকুতি মিনতি করলেও বিন্দুমাত্র মন গলেনি বালুরঘাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের। ঢুকতে দেওয়া হয়নি পরীক্ষাকেন্দ্রে। আর এতেই যেন কিছুটা অভিমানি হয়ে স্কুলের এলাকা ছেড়ে চলে যায় ভূষণ।

এদিকে এই ঘটনার খবর পেয়ে বাড়ির লোকেরা ভূষণকে খুঁজতে বেরিয়ে দুপুর থেকে রাত গড়ালেও তার খোজ পাননি। খবর লেখার সময় পর্যন্ত মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ভূষণের কোনও খোঁজ পায়নি তার পরিবার।

জানা যায়, বাবা হারা পরিবারে বৃদ্ধ মা ও দাদার হাতেই সংসারের দায়ভার। ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করে দাদা নেপাল কর্মকার ভাইকে নিয়ে রোজই স্বপ্ন দেখেন। বৃদ্ধ মাও রোজগার করে হাল ধরেন সংসারের। তাই বাড়ির যাবতীয় কাজ সামলাতে হয় ভূষণকেই। পড়াশুনার অবসরে দাদার কাজে হাত লাগায়ও সে। ছোট থেকেই স্বভাবে শান্ত ও মেধাবী ছাত্র হিসাবে পরিচিত ভূষণ। পরিবারের আর্থিক প্রতিকূলতাকে জয় করে এবারে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে সে। বালুরঘাটের মঙ্গলপুর আদিবাসী পাড়া এলাকার বাসিন্দা ছোট্ট ভূষণ রোজকার মতো বাড়ির কাজ সেরেই পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়েছিল। যেখানে পৌছাতেই সামান্য দেরি হয় তার। আর তাতেই বেজায় ক্ষিপ্ত হন ওই পরীক্ষাকেন্দ্র তথা বালুরঘাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। ঢুকতে দেওয়া হয় না পরীক্ষার্থী ভূষণ কর্মকারকে। নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ার পর আসাতেই তাকে ঢুকতে দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক সৃজিত সাহা। আর এরপর থেকেই নিখোঁজ হয়ে যায় ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।

অন্যদিকে তপনের একটি স্কুলে প্রশ্নপত্র বিভ্রাটের জেরে কিছুটা সময় অপচয় হওয়ায় পরীক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট সময়ের পরেও বাড়তি সময় দিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। কিন্তু এক্ষেত্রে কেনই বা তা করা হল না, যার কোনও সুদুত্তর মেলেনি।

পরীক্ষার্থীর দাদা নেপাল কর্মকার বলেন, ভাইকে তারা খুঁজে পাচ্ছেন না। দেরি করে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ায় আজ তাকে ঢুকতে দেয়নি। বিষয়টি একটু বিবেচনা করা উচিত ছিল। একটা বছর তার জীবনে ক্ষতি হয়ে গেল।

জেলা স্কুল পরিদর্শক মৃন্ময় ঘোষ বলেন, ঘটনাটি তাঁর জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *