ঐতিহাসিক বক্সা ফোর্ট সহ ৬ গ্রামে ঘুরলেন জেলাশাসক সহ এক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল

আমাদের ভারত, আলিপুরদুয়ার, ৮ নভেম্বর: বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের কোর এলাকায় দুর্গম পাহাড়ে থাকা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মৃতি বিজড়িত বক্সা ফোর্টের সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগেই। এবার সেই কাজ পরিদর্শন সহ পাহাড়ে বসবাসকারি অধিবাসীদের সমস্যার কথা জানতে তিন পাহাড় ডিঙিয়ে পরপর ৬টি আলাদা গ্রামে পৌঁছে গেলেন আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মিনা সহ এক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। শনিবার গোটা দিনে সান্তলাবাড়ির ভিউ পয়েন্ট থেকে খাড়া পাহাড় চরে পায়ে হেঁটে পৌছে গেলেন প্রায় ৩০০০ ফুট উঁচু লেপচাখা গ্রামে। ফের লেপচাখা থেকে নেমে আসলেন ভিউ পয়েন্টে। সকলেই প্রায় ১৬কিমি হাঁটলেন পাহাড়ি চড়াই উত্তরাই ধরে। এরই মাঝে শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কোভিড প্রোটোকল মেনে দেখা করলেন, টানা ২ ঘন্টা বক্সা ফোর্ট-এ আর্কিওলজিস্টদের সঙ্গে ফোর্টের সংরক্ষণের কাজ নিয়ে খুঁটিনাটি জেনে নিলেন।

উল্লেখ্য, শনিবার দিনভর বক্সা পাহাড়ে ছিলেন জেলা প্রশাসন ও ব্লক প্রশাসনের আধিকারিক ছাড়াও পুর্তদপ্তরের আধিকারিক, জল, বিদ্যুৎ দপ্তরের আধিকারিকরাও। এদিন সকাল ১১টা নাগাদ সান্তলাবাড়ি ভিউ পয়েন্ট থেকে যাত্রা শুরু করে সদরবাজার, ডারাগাঁও, বক্সা ফোর্ট, বখাটালাইন, লেপচাখা গ্রামে যান জেলাশাসক নিজেই। বক্সার পাহাড়ি পথে ধ্বসের সমস্যা রয়েছে। এদিন রাস্তার বিষয়টি টানা পর্যবেক্ষণ করেন জেলাশাসক। গত ২ বছরে কি কি সৌন্দর্যায়নের পাশাপাশি রাস্তা সংস্কার, ড্রেনেজ, বিদ্যুতের যা কাজ হয়েছে তাও পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর সকলেই পৌঁছে যান বক্সা ফোর্টে। সেখানে কলকাতার একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থা প্রায় রাজ্যের দেওয়া ৫ কোটি টাকায় সংরক্ষণের কাজ করছে। টানা ২ ঘন্টা আর্কিওলজিস্টদের সঙ্গে কথা বলেন জেলাশাসক। জানা গেছে, ফোর্টকে তার ১০০ বছরের পুরনো রূপ ফিরিয়ে দেওয়া হবে।জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার।মিনা বলেন,”আপাতত বক্সা ফোর্ট সংস্কারে প্রায় ১৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। খুব সুন্দরভাবে কাজের অগ্রগতি হচ্ছে।” এদিন বক্সা ফোর্ট এর যাবতীয় খুটিনাটি সম্পর্কে জেনে নেন জেলাশাসক।

এরপর স্থানীয় কমলালেবু চাষিদের একাংশের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিনিধিদল।তাদের সমস্যাগুলি শুনে নেন। কমলালেবু চাষীদের একাংশ বলেন গাছে পোকা লেগে যাচ্ছে। ফলন কম।স্থানীয় মহলের মতে কমলালেবু চাষের বিষয়টি কৃষি বিশেষজ্ঞদের এসে দেখতে হবে। উল্লেখ্য, বক্সার কমলালেবু একটি সময় যথেষ্টই জনপ্রিয় ছিল। এরপর বক্সা ফোর্ট থেকে আর ২ কিমি পাহাড়ি চড়াই ভেঙ্গে পায়ে হেটে চলে যান লেপচাখাতে। সেখানে স্থানীয়দের সাথে পর্যটন সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।এদিকে একসাথে প্রশাসনের আধিকারিকদের অনেককে দেখে খুশি স্থানীয়রা। ভিউ পয়েন্ট থেকে বক্সা ফোর্ট প্রায় ৩ কিমি দুর্গম রাস্তার সংস্কার নিয়ে জানান স্থানীয়রা। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান জেলাশাসক।বক্সা ফোর্ট ও লাগোয়া ১৪টি গ্রামে মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ নেই।রাজাভাতখাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ববি লামা বিষয়টি জানালে জেলাশাসক বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান। এদিকে বিশেষজ্ঞমহলের একাংশ বলেন, ভিউ পয়েন্টে থেকে বক্সা ফোর্ট অবদি বড় চওড়া রাস্তা নির্মাণ যথেষ্ট কঠিন।তবে পায়ে হাটার চওড়া সুন্দর রাস্তা তৈরি সম্ভব সহজেই। জেলাশাসক জানান, সবকিছু আজ খতিয়ে দেখা হয়েছে। ৬টি গ্রামের মানুষের সাথে কথা হয়েছে।ছোট ছোট কিছু বিষয় উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।” তবে পাহাড়ে একসাথে প্রশাসনের অনেক আধিকারিকদের একসাথে পেয়ে মানুষের আত্মবিশ্বাস অনেকটা বেড়ে যায় বলেই মত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *