ছাত্রকে বেধড়ক মারের অভিযোগ উঠল শিক্ষকের বিরুদ্ধে, রানাঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের

স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদিয়া, ৮ এপ্রিল: ছাত্রকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। প্রধান শিক্ষক সুবীর ভৌমিকের লাঠির মারে পিঠে একাধিক আঘাতের চিহ্নের সৃষ্টি হয়। ঘটনায় থানার দ্বারস্থ আহত ছাত্রের পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার রানাঘাট থানার নাসারা বয়েজ স্কুলে।

শিক্ষকদের নজরদারির গাফিলতিতে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। দুই ছাত্র স্কুলে মারামারি করছে অথচ শিক্ষকদের নজর নেই তাতে। অভিযোগ, সেই সময় প্রধান শিক্ষক এসে নবম শ্রেণির ছাত্র সায়ন দত্তকে বেধড়ক মেরে পিঠে বেত ভেঙ্গে দেয়। পিঠে কালশিটে পড়ে যায়। একাধিক দগদগে আঘাতের চিহ্নে অসুস্থ হয়ে পড়ে সায়ন। অভিভাবকরা এলে দেখা করতে দেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। আরো অভিযোগ ওঠে, পরিবারের তরফ থেকে কোথাও অভিযোগ করলে স্কুল থেকে টিসি নিতে হবে। ঘটনার বিবরণ জানিয়ে রানাঘাট থানার দ্বারস্থ আহত ছাত্রের অভিভাবক।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে চাননি। প্রধান শিক্ষকের হয়ে মুখ খুললেন স্কুলের প্রেসিডেন্ট মনোজ সেনগুপ্ত। নাসরা বয়েজ হাই স্কুলের প্রেসিডেন্ট মনোজ সেনগুপ্ত জানান, “শিক্ষকের উপর অভিযোগ উঠেছে মারধর করা হচ্ছে, নজরদারির অভাব রয়েছে এই স্কুলের প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রথমেই আমি এই কথাটা খণ্ডন করছি। তার কারণ দু’বছর আগে এই স্কুলের যে পরিবেশ ছিল সেই পরিবেশ থেকে ১০০ গুন ভালো পরিবেশ হয়েছে এই শিক্ষকের আমলে। পাশাপাশি গতকালের যে ঘটনা তা দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। যে ছেলেটিকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সেই ছেলেটি নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটির জেরে একটা ছেলেকে বেঞ্চের কোনায় তার বুক দিয়ে পুরো ঠেসে ধরেছিল। তার শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হচ্ছিল। ছেলেটির সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারায়। যায় যায় অবস্থা। আমি সঙ্গে সঙ্গে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিজন সরকার ওরফে বাপ্পার কাছে খবর দি। বাপ্পা সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে দেই। সমস্ত স্যার থেকে শুরু করে মিড ডে মিলের মাসিরা ও ব্যাপারটা জানেন। ছেলেটাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিছু সময়ের এদিক ওদিক হলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। এরপর হেডস্যার যখন ওই ছেলেটাকে ডেকে জানতে চায় কেন তুই ওকে ওভাবে মারলি ও তো তোদেরই বন্ধু তখন সায়ন বলে এরকম করলে সে যদি আমার বাবা হয় তাহলে বাবাকেও মারবো আবার স্যার হলে স্যারকেও মারবো?

এরপরই হেডস্যার নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না। একজন শিক্ষক তার ছাত্রকে শাসন করেছে। আপনারা যেহেতু সংবাদমাধ্যম থেকে এসেছেন প্রকৃত তথ্যটাকে যাচাই করে সঠিকভাবে সংবাদ পরিবেশন করে সমাজ ও দশের কাজ ও ছাত্রদের ভবিষ্যতের স্বার্থে সঠিক সংবাদ পরিবেশন করুন”।

নাসিরা বয়েজ হাই স্কুলের ছাত্র সায়ন দত্ত জানায়, “আমার এক বন্ধু আমাকে মা তুলে গালিগালাজ করে। তখন আমার সাথে ওর মারামারি হয় ওকে হসপিটালে ভর্তি করা হয়। এই কারণে হেডস্যার কিছু না শুনে আমাকে বেধড়ক পেটায়। বাবাকে ডেকেছিলেন হেডস্যার। আমাকে বাবার সাথে দেখা করতে যাওয়া হয়নি। এমনকি আমাকে জানায়ওনি যে বাবা এসেছে। অন্য স্যাররা এসে আমার চিকিৎসা করে। বরফ লাগিয়ে মলম দিয়ে দেয়। কিছুটা হলেও তখনকার মত ব্যথার উপশম হয়। আমি এখন স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছি। হেড স্যার আমাকে শাসায় এই বলে যে, “যদি কোনো সাংবাদিককে জানাস বা পুলিশের কাছে কেস হয় তাহলে তোকে টিসি দিয়ে দেবো”।

ছাত্রের মা মাম্পি দত্ত জানান,”আমরা চাই আমার ছেলের সাথে যেটা হয়েছে আর যেন অন্য কোনো বাচ্চার সাথে না হয়। আজ স্যার আমার ছেলেকে মেরেছে দ্বিতীয় দিন অন্য বাচ্চাকেও মারতে পারে। আমরা রানাঘাট থানায় অভিযোগ করেছি ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *