বিশ্বভারতীতে ভাঙ্গচুরের ঘটনায় গ্রেফতার ৮, এফআইআরের মূল অভিযুক্তরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

আশিস মণ্ডল, শান্তিনিকেতন, ১৮ অগাস্ট: মেলার মাঠে তাণ্ডবে মূল অভিযুক্ত দুবরাজপুর বিধানসভার বিধায়ক তৃণমূল নেতা নরেশ বাউরি, বোলপুর পুরসভার প্রশাসক সুকান্ত হাজরা, বিশ্বভারতীর প্রাক্তন কর্মী দেবব্রত সরকার ওরফে গগন, বোলপুর পুরসভার কো-অর্ডিনেটর ওমর শেখ সহ ন’জন। কিন্তু পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছে তাদের নাম নেই বিশ্বভারতীর অভিযুক্ত তালিকায়।

সোমবার সকালে প্রাচীর ঘেরাকে কেন্দ্র করে ধুন্দুমার কাণ্ড বাধে শান্তিনিকেতনে। নির্মাণ সামগ্রী লুঠের পাশাপাশি ভাঙ্গচুর করা হয়েছে বিশ্বভারতীর পুরাতন গেট, বিদ্যুতের খুঁটি। এরপরেই নয় জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে। অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ আট জনকে গ্রেফতার করে। কিন্তু নির্দিষ্ট ভাবে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে তাদের কেউ নেই ধৃতদের মধ্যে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করা হয়েছে।

সোমবার রাতে প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিশ্ব ভারতী জানিয়েছে, যে গোটা বিষয়টি আচার্য্যর অবগতির জন্য জানানো হয়েছে। বিশ্ব ভারতী ক্যাম্পাসের মধ্যে দুটো থানা থাকা সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। সমস্ত ভবনের প্রধান, আধিকারিক এবং অধ্যক্ষদের নিয়ে বৈঠকে নিরাপত্তা জনিত কারণে সিদ্ধান্ত হয় বিশ্বভারতীকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হবে। প্রেস রিলিজে বলা হয়, ২০০৪, ২০০৭ এবং ২০১১ সালের বিভিন্ন কমিটি ও রাষ্ট্রপতির নির্দেশ অনুযায়ী এই প্রাচীর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি, জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ ও ক্যাগের সুপারিশ মেনে এই কাজ। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে আবেদন করা হয়েছে যে কোনও একটি সংস্থার মাধ্যমে এই বিপুল ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে অভিযুক্তদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করার জন্য।

অভিযোগ, চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও জেলা প্রশাসন কর্তারা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি না করায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী চাওয়া হয়েছে উপাচার্যের জন্য। যেহেতু রাজ্য সরকার তাদের এন ভি এফ তুলে নিয়েছে। শুধু তাই নয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী চাওয়া হয়েছে।
কারন রাতে বিশ্ব ভারতীর অধ্যাপক বিপ্লব লোহার চৌধুরীর সীমান্ত পল্লীর বাড়িতে একদল দুষ্কৃতী হামলা চালায় বলে অভিযোগ।

ঘটনায় প্রবীণ আশ্রমিক প্রাবন্ধিক স্বপন কুমার ঘোষ মন্তব্য করেছেন, “যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিশ্বভারতী যদি পাঁচিল দেওয়ার আগে রবীন্দ্র গবেষক, স্থানীয় প্রাক্তনী-পড়ুয়া-অধ্যাপক-আশ্রমিক-বান্ধব এবং সর্বোপরি প্রশাসনের সাথে আলোচনা করতেন, তাহলে ভালো হতো। রবীন্দ্রনাথ তো সকলকে নিয়েই চলতে চেয়েছিলেন।’’ রবীন্দ্র পরিবারের সদস্য আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুরের জানিয়েছেন, ‘‘ঘটনায় আর কি প্রতিক্রিয়া দেব। খুব খারাপ লেগেছে। নৈরাজ্যকর ঘটনা।’’

বিশ্বভারতীর অভিযোগ অনুযায়ী চেয়ার, টেবিল, লাইট, খুঁটি, সিসি ক্যামেরা, এলইডি, নির্মান সামগ্রী মিলে বিপুল ক্ষতি হয়েছে তান্ডবে। যা কম করে কয়েক লক্ষ টাকা। বিবৃতি অনুযায়ী বিশ্বভারতী অনড়, তান্ডবকারীদের কাছে থেকেই আদায় করা হবে ক্ষতিপূরন। ধন্দ এখানেই।

বিশ্বভারতীর হামলার ঘটনার পর তৃণমূল বিধায়কের নামে অভিযোগ করা প্রসঙ্গে দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মন্ডল। তিনি বলেন, “তৃণমূলের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়। আমি নিজেও বিশ্বভারতী নিয়ে আগ্রহী নই। তবে যেভাবে রবীন্দ্র আদর্শকে নষ্ট করে পাঁচিল দেওয়ার কাজ হচ্ছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বোলপুরের বাসিন্দা হিসাবে যে কেউ যেতে পারে। এর সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। আমি উল্টে বলতে পারি উপাচার্যের পাশে পাঁচিল করার সময় অনেক বিজেপির লোক ছিল।”
অন্যদিকে, সোমবার হামলার পর পুলিশের করা সুয়োমোটো কেসে মূল অভিযুক্তদের বাইরে আটজনকে গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার বোলপুর আদালতে তুললে, বিচারক তাদের ২ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ।
এদিকে নিরাপত্তার কারণে দেখিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ব ভারতী বন্ধ রাখার ঘোষনার পর এদিন সকাল থেকেই সুনশান ছিল শান্তিনিকেতন ক্যাম্পাস।
বিশ্বভারতী প্রাক্তন জন সংযোগ আধিকারিক অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ” যে ভাবে বিশ্বভারতীর উপর হামলা হল তার তীব্র নিন্দা করছি। তবে এই ঘটনার পর বিশ্বভারতী যে ভাবে প্রেস রিলিজ দিয়ে বিস্তারিত জানালো, ঠিক সেই ভাবেই কাজ শুরুর আগে জানালে হয় তো বিভ্রান্তি দূর হত। এই ধরনের কলঙ্কজনক ঘটনা হত না। ”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *