৬০ টাকার মদ ৪০০ টাকায়, ৪০০ টাকার মদ ২২০০ টাকায়! লকডাউনে বেআইনিভাবে মদ বিক্রি, তীব্র ক্ষোভ এলাকায়

স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদীয়া, ২৫ এপ্রিল:
লকডাউন উপেক্ষা করে বেআইনিভাবে মদ বিক্রির অভিযোগ উঠল নদীয়ার শিমুরালি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শিমুরালি বাজারে। শুধু তাই নয় কয়েকগুন বেশি দামে মদ বিক্রি করা হচ্ছে বলে শিমুরালি বাজারের ওই দেশি মদের দোকানের বিরুদ্ধে অভিযোগ। এলাকার মানুষদের আরও অভিযোগ, ওই মদের দোকান দেওয়া হয়েছে জনবহুল এলাকার মধ্যে, পাশেই রয়েছে মন্দির ও স্কুল। লকডাউনের মধ্যে প্রতিদিন ব্ল্যাক মার্কেটিংয়ে মদের কেনাবেচা নিয়ে সমস্যা লেগেই থাকছে। আগামী দিনে খুনোখুনি হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে আতঙ্কে রয়েছেন এলাকার মানুষ। অভিযোগ, ৬০ টাকার দেশি মদ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়, আর ৪০০ টাকার বিলিতি মদ ২২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জানা যায়, শিমুরালি বাজারে লকডাউন উপেক্ষা করে বেআইনিভাবে মদ বিক্রি হচ্ছে এবং সেই মদ বেশি দাম দিয়ে কিনে গরিব মানুষ খাচ্ছে। ফলে সংসারে অশান্তি হচ্ছে। এই নিয়ে এলাকায় চারিদিকে ক্ষোভ রয়েছে। এলাকার মানুষদের অভিযোগ, মাস দেড়েক ধরে ঘরে আয় নেই, উনুনে হাঁড়ি চাপছে না, কিন্তু তাদের স্বামীরা ঘরের জিনিসপত্র বেচে দিয়েও রোজ মদ খেয়ে আসছে। এলাকায় অশান্তি করছে। প্রতিবাদ করলে তাদের মারধর করছে।

অভিযোগ শিমুরালি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শিমুরালি বাজারে এক দেশি মদের দোকানের বিরুদ্ধে। বাজারের পার্শ্ববর্তী সুতারগাছি গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ এই মদের দোকান যেদিন থেকে এখানে চালু হয়েছে, তখন থেকেই এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। এই বাজারের রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন মন্দির , স্কুল এবং স্টেশনে বহু স্কুল পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীদের এবং মহিলাদের যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু এখানেই রয়েছে সেই দেশি মদের দোকান। যার কারণে প্রায় প্রতিদিনই বাজারের মধ্যে মদ খেয়ে নোংরামো এবং মেয়ে, বৌদের টিটকারি শুনতে হয়।

এছাড়াও বাসিন্দাদের অভিযোগ তিনদিন আগে আনুমানিক রাত সাড়ে নটার সময় খোদ কাউন্টারের মালিক প্রকাশ মণ্ডল লকডাউনকে অমান্য করে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ১০৭গাড়ি(ছোঠাতি) নিয়ে মদ বিক্রি করার সময় মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। দুজন ব্যক্তি আহত হয় এই ঘটনায়। তাই এলাকাবাসী যথেষ্ট আতঙ্কিত। পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতে তারা আশঙ্কা করছে যেকোনো সময় কারো প্রাণ সংশয় হতে পারে।

এলাকার বাসিন্দা কাকলি রায় (নাম পরিবর্তিত) জানান, এটা শুধু লকডাউন বলে না, কোনও সময়েই যেন এই কাউন্টারটা এখানে না থাকে। কারণ বাজারের মধ্যে যেখান দিয়ে বাড়ির মেয়েরা সব সময় যাতায়াত করছে সেখানে কিভাবে এটাকে মেনে নেব? আর ওরা তো মদ খেয়ে ওখানে শান্ত ছেলেদের মত বসে থাকছে না, রীতিমত এলাকায় নোংরামো করছে। মা বোনদের নিয়ে কটূক্তি করছে, এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আর মন্দির, স্কুলের পাশে মদের দোকানে আমাদের আপত্তিই রয়েছে।

আরেক বাসিন্দা চুমকি দে (নাম পরিবর্তিত) জানান, নামেই লকডাউন। মদের কাউন্টার না খুলেও মদ বিক্রি হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। রীতিমতন তিনটে ১০৭গাড়ি(ছোটহাতি) করে মদ বিক্রি হচ্ছে। প্রশাসন কিচ্ছু জানেনা। মনে হয় এটা খেটে খাওয়া গরিবদের জন্যই লকডাউন। মাতালদের জন্য আর মদ বিক্রেতাদের জন্য নয়। তা না হলে ৬০ টাকার দেশি মদ ৪০০ টাকা আর ৪০০ টাকার বিলিতি মদ ২২০০ টাকায় বিক্রি হয়?

বাবন দাস (নাম পরিবর্তিত) জানান, ওখানে নকডাউন ছাড়াও প্রায় দিনই গভীর রাতে দোকান খুলে মদ বিক্রি হয়। সাধারণ মানুষের ইনকাম নেই, বাড়িতে খাবার জুটছে না, কিন্তু তবুও বাড়ির জিনিস বন্ধক দিয়ে মদ খাচ্ছে। আমরা চাই কাউন্টারটা উঠে যাক। তাহলে আমরা একটু ভালো ভাবে বাঁচবো। তাছাড়া, মন্দির, স্কুলের পাশে মদের দোকান কোনওভাবেই বরদাস্ত করা যায় না।

বিজেপি জেলা সহ-সভাপতি পঙ্কজ বসু জানান, এখানকার বেশিরভাগ পরিবারের যেসব পুরুষ মানুষরা আছে তারা প্রতিদিন সন্ধ্যা হলে একটা দেশি মদ যার ৬০ থেকে ৭০ টাকা দাম সেটাকে ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা দিয়ে কিনে খাচ্ছে। এখানে চিন্তার বিষয় যাদের টিনের ঘর, টিনের চাল সেই পরিবার যারা রোজ আনে রোজ খায় তারা এই পয়সা কোথায় পাচ্ছে? বাড়ির মহিলারা আমার কাছে এসে কাঁদছে যে তাদের স্বামীরা বাড়িতে থালা-বাসন বিক্রি করছে, আলমারি থেকে গয়না চুরি করে নিয়ে বিক্রি করছে। এই অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য আরো নোংরা হচ্ছে পরিবেশ। খুনোখুনির মতন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

রানাঘাট দক্ষিণের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার এ বিষয়ে বলেন, বামফ্রন্ট শেষদিকে আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ায় আয়ের উৎস হিসাবে মদ বিক্রি বেছে নিয়েছিল। সেই জন্য পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে তারা লাইসেন্স দিয়েছিল। তৃণমূল সরকার আসায় আমরা মনে করেছিলাম উল্টোটা হবে। দিদি আসছেন হয়তো এগুলো বন্ধ হবে। কিন্তু দেখলাম তিনি এসে একধাপ এগিয়ে এক একটা পঞ্চায়েতের মধ্যে একাধিক কাউন্টার খুলে বসলেন। আর সেটাই রাজ্য সরকারের আয়ের বড় উৎস বলে শোনা যায়। সেই জন্য লকডাউনেও যাতে আয়ের উৎস ঠিক থাকে তাই প্রশাসনিকভাবে তিনি কড়া পদক্ষেপ করছেন না।

এ বিষয়ে কল্যাণী এসডিওর কাছে জানতে চাইলে ব্যাপারটা এড়িয়ে গিয়ে বলেন, “এই মুহূর্তে কোভিড১৯ নিয়ে আমরা খুব ব্যস্ত আছি। এখন এই মুহূর্তে প্রেসের সঙ্গে কথা বলতে পারব না। যদি কিছু আপনাদের জানার থাকে তাহলে জেলাতে যোগাযোগ করুন।

কল্যাণী জয়েন্ট বিডিও সুরঞ্জন বিশ্বাস জানান, আমি এখনো অভিযোগটা দেখে উঠতে পারিনি। আপনার থেকেই ব্যাপারটা জানলাম। তবে স্কুল, মন্দিরের পাশে মদের কাউন্টার থাকার কথা নয়। সম্ভব হলে আমি আজকেই আইসিকে নিয়ে সরজমিনে তদন্তে যাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *