সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ৮ জুলাই: অবৈজ্ঞানিক ভাবে নদী থেকে বালি তোলার কারণে দ্বারকেশ্বর নদ ক্রমেই বিপদজনক হয়ে উঠছে, এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন দ্বারকেশ্বর সংলগ্ন গ্রামগুলির বাসিন্দারা। তাদের বক্তব্য, এই নদীতে স্নান করতে যাওয়া এখন বিপদজনক হয়ে উঠেছে, যেখানে সেখানে, যেমন খুশি গভীরতা করে বালি তোলার জন্য। এতে গভীরতা বুঝে উঠতে না পেরে স্নান করতে নেমে অনেকেই তলিয়ে যাচ্ছে। এতে জলের স্রোতে তলিয়ে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। তাদের মতে, এই ঘটনা এড়াতে কড়া নজরদারীর প্রয়োজন। অবন্তিকা, ভাটরা, পাত্রবাগড়া, ধরাপাট, পেঁচাকুড়া বেন্দা ও অযোধ্যার বাসিন্দারা এমনটাই মনে করছেন।
উল্লেখ্য, এই নদীতে স্নান করতে গিয়ে চলতি বর্ষায় গত ১৫ দিনে বাঁকুড়া জেলায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ৪ জুলাই বিষ্ণুপুর সুভাষপল্লী সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদীর ঘাটে একটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়। জানা যায় মৃত বান্দার বাসিন্দা হারাধন রায়। জেলেরা মৃতদেহটি দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। প্রাথমিক ভাবে জানাগেছে, নদীতে স্নান করতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এই ঘটনার আগে গত ২৬ জুন ২০২৫ মামা ও দুই সঙ্গীর সঙ্গে দ্বারকেশ্বর নদীতে ইন্দাস থানার সামড়োঘাট সেতুর কাছে স্নান করতে নেমে তলিয়ে গিয়ে মৃত্যু হয় পঞ্চম শ্রেণির এক পড়ুয়া শেখ সালমানের। শেখ সালমান স্কুলে না গিয়ে দুপুরে মামা ও পরিবারের অন্য দুই সঙ্গীর সঙ্গে স্নান করতে যায় দ্বারকেশ্বরের সামড়োঘাটে। সেখানে জলের স্রোত বেশি থাকায় তলিয়ে যেতে থাকে তিনজনই। স্থানীয় জেলেরা দু’জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও মারা যায় ৫ম শ্রেণির ছাত্র ৯ বছরের সালমান। জেলেদের অভিযোগ, সামড়োঘাটে নদীর গভীরতা বেশি থাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।
এই ঘটনার মাত্র ৭২ ঘন্টা আগে বিষ্ণুপুর থানার ষাঁড়েশ্বর মন্দিরের কাছে দ্বারকেশ্বরের দমদমা ঘাটে বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ৮ জন পড়ুয়া স্কুল পালিয়ে দুপুর একটা নাগাদ সাইকেলে করে যায়। অন্যান্যরা পাড়ে বসে থাকলেও অর্কদীপ দাস, সায়ন চট্টোপাধ্যায় ও পরমেশ্বর মিশ্র স্নান করতে নামে। জলের তোড়ে তলিয়ে যায় তিন পড়ুয়াই। তাদের মৃত্যু হয়।
গত মঙ্গলবার অযোধ্যার বাসিন্দা শ্যামল কর্মকার ও তুলসী কর্মকার বলেন, বর্ষায় ছেলেমেয়েদের প্রতি কড়া নজর রাখতে হচ্ছে, যাতে তারা দ্বারকেশ্বরে স্নান করতে না যায়। চলতি বছরে বর্ষা আসার পর গত ১৫ দিনে ৪ নাবালক সহ ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় তারা আতঙ্কিত। তাদের বক্তব্য, পার্শ্ববর্তী বেন্দা গ্রামের হারাধন রায় একদিন আগে থেকে নিখোঁজ ছিল। তখন কেউ বুঝতে পারেনি যে সে নদীতে তলিয়ে গেছে।
দ্বারকেশ্বরে স্নান করতে যাওয়া বারিদ রায় ও ফেলু বাগদি জানান, যে এই নদে যেভাবে যেখান সেখানে যেমন খুশি গর্ত করে বেপরোয়া ভাবে বালি তোলা হয় তাতে স্নান করতে নেমে তলিয়ে যাওয়ার ভয় থাকেই।