শাশুড়িকে নিমন্ত্রণ করে খুন করে বস্তায় ঢুকিয়ে খালে ফেলার সপরিবারে পরিকল্পনা! ধৃত বউমা-সহ ৫

রাজেন রায়, কলকাতা, ১৪ আগস্ট: খোদ মা-বাবা নিজেরাই মেয়ের শাশুড়িকে খুন ও দেহ লোপাটে সাহায্য করছেন, এমন ঘটনা মনে করতে পারছেন না লালবাজারের অনেক গোয়েন্দা কর্তারাই। কিন্তু শুক্রবার ভোররাতে এমনই এক ঘটনার সাক্ষী হল পুলিশ। এদিন ভোর রাতে প্রগতি ময়দান থানার চৌবাগা বাসস্ট্যান্ডের কাছে সন্দেহজনক ট্যাক্সির ডিকি থেকে উদ্ধার করা হয় শাকভর্তি বস্তার মধ্যে থাকা এক মহিলার দেহ। আর তাদের জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, মেয়ের শাশুড়িকে তাদের বাড়িতে ডেকে এনে খুন করে দেহ লোপাট করতে নিয়ে যাচ্ছেন মেয়ের বাবা-মা এবং মামা। ট্যাক্সিচালক সহ তাদের ৩ জনকে গ্রেফতারের পর বাপের বাড়ি থেকে অভিযুক্ত বৌমাকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। থানা থেকেই গোটা ঘটনা জানতে পেরেছেন বৃদ্ধার ছেলে।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সুজামানি গায়েন (৬০)।
তাঁকে খুনের অভিযোগে বড় বউ সুজাতা গায়েন ও তাঁর মামা অজয় রাং, মা মালিনা মণ্ডল, বাবা বাসু মণ্ডল ও ট্যাক্সি চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই বৌমার ওপর অসম্ভব অত্যাচার করতেন শাশুড়ি সুজামানি। বৌমার পক্ষে তা মেনে নেওয়া আর সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু আর ১০টা ঘটনার মত একেবারেই নিজে আত্মহত্যা করার কথা ভাবেননি অভিযুক্ত সুজাতা। উলটে নিজের বাবা-মা আর মামার সঙ্গে মিলে শাশুড়িকেই সরিয়ে ফেলের ছক কষে ফেলেন।

শাশুড়িকে খুন করে দেহ লোপাট করে দেওয়ার সম্পূর্ণ পরিকল্পনা করে ফেলেছিলেন বৌমা ও তার মা-বাবা-মামা। তদন্তে জানা গিয়েছে, হরিদেবপুরের কবরডাঙার বাসিন্দা সুজামানি গায়েন (৬০)-এর ছেলে খোকন গায়েনের সঙ্গে বছর কয়েক আগে বিয়ে হয় প্রগতি ময়দানের আড়ুপোতা গ্রামের সুজাতা মণ্ডল ওরফে সুজাতা গায়েনের। সম্প্রতি নিজের বাপের বাড়ি গিয়েছিলেন সুজাতা। মেয়ে শ্বশুরবাড়ি ফিরে যাবে বলে নিমন্ত্রণ করে শাশুড়ি সুজামানিকে সেখানেই ডেকে পাঠানো হয়। জেরায় জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে মেয়ের বাবা মা এবং মামা মিলে খাওয়া দাওয়া করেন। রাত তিনটের পর সুজামানিকে প্রথমে মাথায় লাঠি দিয়ে মেরে এবং পরে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। এদিকে ছেলে খোকন গায়েন রাত পর্যন্ত মা না ফেরায় মা শ্বশুরবাড়িতেই রয়ে যাবেন বুঝতে পেরে দরজা আটকে শুয়ে পড়েন।

তার পরের পরিকল্পনাও রীতিমত গুছিয়ে রাখা হয়েছিল। একটি ট্যাক্সি আগে থেকেই বলে রাখা হয়েছিল। একটি সবজির বস্তার মধ্যে দেহ ঢুকিয়ে ফেলা হয়। সামনে রাখা হয় একটি কুমড়োভর্তি বস্তা। কিন্তু ভোররাতে বাসন্তী হাইওয়েতে ওই ভাবে ট্যাক্সির ডিকিতে মাল বোঝাই নিয়ে যাওয়া দেখে প্রথমে পরমা আইল্যান্ডের কাছে আটকায় পুলিশ। সেখানে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফের প্রগতি ময়দান থানা এলাকায় চৌবাগা বাসস্ট্যান্ডের কাছে গাড়ি আটকায় পুলিশ। কথায় অসঙ্গতি থাকায় পুলিশের সন্দেহ হয়। ডিকি খুলতেই দেখা যায়, সেখানে রয়েছে এক বস্তা কুমড়ো। সেগুলি সরিয়ে খতিয়ে দেখতে গিয়ে শাকভর্তি একটি বস্তার মধ্যে ওই বৃদ্ধার দেহ বেরিয়ে আসে। সঙ্গে সঙ্গে ওই ট্যাক্সিকে আটকে সকলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *