তপনে দুই শিশু সহ একই পরিবারে পাঁচজন খুন, একজনের হাতে চার অভিযুক্তের নাম নিয়ে ধন্দে পুলিশ

পিন্টু কুন্ডু , বালুরঘাট, ৮ নভেম্বর:
দুই শিশু সহ একই পরিবারের ৫ সদস্যের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধারকে ঘিরে চাঞ্চল্য। রবিবার দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন ব্লকের চন্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের জামালপুর গ্রামের ঘটনা। এদিন সকালে ঘটনার খবর পেয়েই বাড়ি থেকে ওই মৃতদেহগুলি উদ্ধার করে তপন থানার পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে মৃতদের নাম অনুপ বর্মণ, উলুবালা বর্মণ, মল্লিকা বর্মণ, বিউটি বর্মণ ও স্নিগ্ধা বর্মণ। ঝুলন্ত অবস্থায় অনুপ বর্মনের দেহ উদ্ধার করা হলেও বৃদ্ধ মা উলুবালা বর্মন এবং স্ত্রী মল্লিকা বর্মনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন লক্ষ্য করা গেছে। নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে দুই শিশু কন্যাকে। সাতসকালে এমন নৃশংস ঘটনা সামনে আসতেই তুমুল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে জামালপুর গ্রামে।

ঘটনার খবর পেয়েই এলাকায় পৌছন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহঃ নাসিম। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত সহ বিরাট পুলিশ বাহিনী। স্থানীয়দের দাবি সম্পত্তির লোভেই দুষ্কৃতীরা পরিবারের সকলকেই খুন করেছে। এদিকে খুন হওয়া বাড়ির মালিক অনু বর্মনের হাতে কলম দিয়ে লেখা চারজনের নাম নিয়ে ধন্দে পড়েছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে কুড়ুল ও বাড়ি পাশের পুকুর থেকে দা উদ্ধার করে তদন্তে নেমেছে তপন থানার পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রের খবর, তপন ব্লকের চন্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের জামালপুর গ্রামের বাসিন্দা অনু বর্মন পেশায় কৃষক। স্ত্রী সহ দুই মেয়ে ও বয়স্ক মাকে নিয়েই তাঁর সংসার। রবিবার তাদের জমিতে ধান কাটার কথা ছিল। সেই মতো সকালে শ্রমিকরা তাকে ডাকতে আসে। দীর্ঘ সময় ডাকাডাকির পরেও কোন উত্তর না পাওয়ায় দরজা টপকে বাড়ির ভিতরে যেতেই রক্তাক্ত ও ঝুলন্ত একাধিক দেহ দেখতে পান তারা। শুরু হয় চিৎকার চেঁচামেচি। ঘটনার খবর জানাজানি হতেই প্রচুর মানুষের ভিড় জমে ওই এলাকায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তপন থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। পুলিশ মৃতদেহগুলি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। খবর পেয়ে ছুটে আসেন মৃতদের আত্মীয় স্বজনরা। পুরো ঘটনা নিয়ে মৃতর আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের লোকেরা খুনের অভিযোগ তুলে সরব হন। যদিও পুলিশের অনুমান, মানসিক অবসাদ থেকেও ঘটতে পারে এই ঘটনা। কারণ , ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন বাড়িমালিক অনু বর্মন বলেও দাবি পুলিশের। মৃত অনু বর্মনের হাতে কলম দিয়ে লিখে যাওয়া চারজনের নাম এবং এলাকা থেকে তাদের গা ঢাকা দিয়ে থাকা এই ঘটনায় রহস্যের মোড় নিয়েছে। দুদিন ধরে তারা হুমকি দিচ্ছিল বলেও সেই লেখায় উল্লেখ করেছেন মৃত অনু। এতেই ঘিরেই কিছুটা ধন্দে পড়েছে পুলিশ।

স্থানীয় বাসিন্দা নিত্যানন্দ বর্মন ও অলক বর্মনরা জানিয়েছেন, অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন অনু। সে কখনোই তার সন্তানদের খুন করতে পারে না। তাদের পরিবারে কোনও প্রকার অশান্তিও তারা লক্ষ্য করেননি। ফলে এটা খুন ছাড়া আর অন্য কিছু হতেই পারে না। তারা চান পুলিশ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।
মৃতের বোন ললিতা সরকার ও অনিতা বর্মনরা জানিয়েছেন, পরিবারের সকলকেই খুন করা হয়েছে। ভাই সবসময় বলত, যারা তার ক্ষতি করবে মরার আগে তাদের নাম লিখে যাবে সে। সেই হিসাবেই চারজনের নাম লিখে গিয়েছে। পুলিশ তাদের খুজে ফাঁসির সাজা দিক।
স্থানীয় তৃনমুল পঞ্চায়েত সদস্য সুকান্ত বর্মন বলেন, অত্যন্ত সহজ সরল ছিল পরিবারটি। নৃশংসভাবে তাদের মেরে ফেলা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত জানিয়েছেন, পুলিশ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *