৪০০ বছরের প্রাচীন ইটাহারের দুর্গাপুর জমিদারবাড়ির পুজোর বৈশিষ্ট্য দেবীর দুদিকে থাকে রাম ও লক্ষ্মনের মূর্তি

স্বরূপ দত্ত, আমাদের ভারত, উত্তর দিনাজপুর, ২১ সেপ্টেম্বর: প্রাচীনত্বের আবহে আজো উজ্জ্বল দুর্গাপুর জমিদারবাড়ির দুর্গাপুজো। উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহার ব্লকের অন্তর্গত দুর্গাপুর রাজবাড়ির পুজোর বয়স প্রায় ৪০০ বছরেরও বেশি পুরনো। জমিদার না থাকলেও রয়েছেন তাঁর বংশধরেরা। বর্তমানে রাজবাড়ির জৌলুস কিছুটা কমলেও প্রাচীনত্বের ঐতিহ্যে আজও অম্লান এই রাজবাড়ির দুর্গাপুজো।

শোনা যায় এই বংশের পূর্বপুরুষ ঘনশ্যাম কুন্ডু বাংলাদেশের যশোর জেলা থেকে এসে আকবরের রাজসভায় চাকরি নিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে বাংলা-বিহার-ওড়িশার একটা বিরাট অংশে জমিদারি রাজত্ব স্থাপন করেছিলেন তিনি। শেরশাহের আমন থেকেই এই বংশে দুর্গা পুজোর প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীতে কৃষ্ণ রায় চৌধুরী, ভূপাল চন্দ্র রায় চৌধুরীর জমিদার পরিবারের বংশধরদের হাত ধরে দেবী পূজিত হন। ইতিহাসের পথ বেয়ে আজও পরবর্তী প্রজন্ম, পুজোর ঐতিহ্য মেনে দেবী দুর্গার আরাধনা করে চলেছেন। প্রাচীনত্বের গন্ধ মাখা কয়েকশো বছরের পুরনো মন্দিরে। তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে পুজোর আবহে বেশ কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। আগে মহালয়ার দিন থেকেই দেবী বন্দনায় মেতে উঠতেন রাজপরিবারের সদস্যরা। দেবীর বোধনে জোড়া মোষ ও পাঁঠা বলির প্রথা ছিল। কিন্তু এখন এই বাড়িতে দেবীর বোধন হয় মহাষষ্ঠীতে। উঠে গেছে বলি প্রথাও। তবে পুজোর পদ্ধতি রয়ে গিয়েছে আগের মতোই। অসুরের গায়ের রং ঘন সবুজ, দুর্গা প্রতিমার মাথার ওপর গঙ্গা, ব্রক্ষ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বরের অধিষ্ঠান থাকে। দেবীর দুদিকে রাম ও লক্ষ্মনের মূর্তি প্রতিমার অত্যতম বৈশিষ্ট্য।

জমিদার পরিবারের বংশধর অভিষেক রায় চৌধুরী বলেন, আমাদের আদি বাড়ি ছিল ইটাহারের চূড়ামন এলাকায়। সেখানে মায়ের পুজো শুরু হয়। কিন্তু বসতভিটে মহানন্দা নদীতে চলে যাওয়ার পর আমাদের পূর্বপুরুষরা দুর্গাপুরে এসে বাড়ি তৈরি করে। এরপরই এখানে মন্দির স্থাপিত হয়। দুর্গাময়ী রায়চৌধুরী এখানে প্রায় একশো বছর আগে পুজো শুরু করেন। আগে মহালয়ার দিন ঘট বসত, ওইদিন থেকেই পুজো শুরু হত। কিন্তু এখন ষষ্ঠীর দিন ঘট বসে। ঐতিহ্য মেনে এখনও দশমীর দিন মেলা বসে। তবে করোনা আবহে এবারে এবিষয়ে সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। আগে পুজোর চারদিনই মোষ ও পাঁঠা বলি হত। এখন বলির পরিবর্তে মায়ের কাছে তার দাম ধরে টাকা দেওয়া হয়। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, আর্থিক কারণে পুজোর চাকচিক্য কিছুটা কম হলেও পুজোর পুরনো ঐতিহ্য এখনও অটুট রয়েছে।

পুজোর প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। দশমীর দিন মেলা উপলক্ষ্যে সব ধর্মের মানুষ সমবেত হন এখানে। পড়াশোনা বা জীবিকার প্রয়োজনে রাজবাড়ির সদস্যরা ছড়িয়ে রয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কিন্তু পুজোর সময় সকলের ঘরে ফেরা চাই-ই। ফলে পুজোর চারটে দিন যেন আগের মতোর জমজমাট হয়ে ওঠে রাজবাড়ি প্রাঙ্গন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *