আমাদের ভারত,৫ ডিসেম্বর:শিবসেনা নিজের মূল এজেন্ডা হিন্দুত্ব থেকেই সরে এসেছে। ক্ষমতার লোভে আপস করেছে দলের মূল আদর্শের সঙ্গে। এই অভিযোগেই একসাথে ৪০০ জন শিবসেনা কর্মী দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিলেন বুধবার।
একটা বড় অংশের শিবসেনা কর্মীদের মধ্যে কংগ্রেস ও এন সিপির সঙ্গে জোট করা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। অনেকেই বলেছেন বিগত বেশ কয়েকবছর ধরে শিবসেনা কংগ্রেস ও এন সিপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে এসেছে। এমনকি এবারের বিধানসভা নির্বাচনেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেনার কর্মীরা কংগ্রেস ও এন সিপির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার আবেদন করে এসেছেন। অথচ শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা দখল করতে শিবসেনার নেতৃত্ব তাদের নীতির একেবারে বিপরীতে অবস্থান কারি কংগ্রেস ও এনসিপির সাথে হাত মেলালো। সেনার নিচুতলার কর্মীদের একটা বড় অংশের ক্ষোভ নির্বাচনের আগে তারা মানুষকে যাদের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন আজ তাদের দল সেই দলগুলোর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। এবার তারা কোন মুখে মানুষের কাছে যাবেন। এই রকম বিক্ষুব্ধ ৪০০ জন শিবসেনা কর্মী বুধবার বিজেপিতে যোগ দেন।
বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে মহারাষ্ট্রের মসনদে বসেছে কংগ্রেস এনসিপি শিবসেনা জোট। এই জোটের সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরেকিন্তু ক্ষমতার সিঁড়ি বেয়ে উঠলেও শিবসেনা থেকে ৪০০ জন কর্মী বিজেপিতে যোগ দেওয়া তাদের যথেষ্ট ভাবাচ্ছে। এই ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে সেনা নেতৃত্বে।
বুধবার মুম্বাইয়ের ধারাভি অঞ্চলে তারা বিজেপির একটি সভায় বিজেপিতে যোগ দেন।
মহারাষ্ট্রের সরকার গড়তে যখন শিবসেনা কংগ্রেস এবং এনসিপি জোট প্রায় চূড়ান্ত তখনই অজিত পাওয়ারের সঙ্গে সমঝোতা করে রাতারাতি ক্ষমতা দখল করে ফেলে বিজেপি।এনসিপি ভেঙে আসা অজিত পাওয়ার দাবি করেছিলেন এনসিপি’র অধিকাংশ বিধায়ক তার সঙ্গে রয়েছেন। আর তারপরই রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহারের সুপারিশ অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে দিল্লিতে পাঠিয়ে দেন রাজ্যপাল। রাতারাতি মন্ত্রিসভার বৈঠক ছাড়াই সেই সুপারিশে সায় দেন প্রধানমন্ত্রী। ভোর পৌনে ছয়টায় রাষ্ট্রপতি শাসন উঠে যায় মহারাষ্ট্র থেকে। মহারাষ্ট্রের মানুষ ঘুম থেকে উঠে দেখেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ মুখ্যমন্ত্রী এবং অজিত পাওয়ার উপ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
বিজেপি দাবি করেছিল সভাপতি অমিত শাহ এই বাজি মেরে দিয়েছেন। কিন্তু কোনভাবে হাল ছাড়েননি মারাঠা স্ট্রং ম্যান পাওয়ার। ই একসময় রাজিব , সোনিয়া গান্ধীকে টক্কর দিয়েছিলেন তিনি। বয়স প্রায় ৮০ ছুঁইছুঁই হলেও তিনি আবারো প্রমাণ করে দিয়েছেন রাজনীতিতে তিনি এখনো স্ট্রং ম্যান। তার কৌশলের কাছে পরাজিত হয়েছে বিজেপির চাণক্য। ফড়নবিশ বলেন, অজিতের ওপর ভরসা করে সরকার গড়তে ঝুঁকি নিয়ে ছিল বিজেপি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমর্থন আসেনি ভাঙেনি এনসিপি। বরং অজিতের সঙ্গে যারা এসেছিলেন তারা একে একে আবার শরদ পাওয়ারের শিবিরে ফিরে গেছেন। বিজেপি আশা করেছিল শিবসেনা ও কংগ্রেসের বিধায়কদের ভাঙ্গিয়ে আনাও সম্ভব হবে কিন্তু শেষপর্যন্ত তাও ব্যর্থ হয়। মুম্বাইয়ের একটি হোটেলে ১৬২জন বিধায়ককে হাজির করেউদ্ধব শরদরা নিজেদের ক্ষমতা বুঝিয়ে দেন।
ফলে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দেওয়ার আগেই সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর ইস্তফা দিয়ে দেন উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার এবং তারপরেই পদত্যাগ করেন ফড়নবিশ। এক মাসেরও বেশি দিন টানাপোড়েনের পর শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে।
কিন্তু পদত্যাগ করার সময় দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এই জোট সরকার কিন্তু বেশিদিন চলবে না। আর তারপরই বুধবার শিবসেনার ৫০০ জন কর্মী বিজেপিতে যোগ দিল। স্বভাবতই এই ঘটনার যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহল।