সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২৭ সেপ্টেম্বর: বাঁকুড়া শহরের গোবিন্দনগর বাস স্ট্যান্ডে এক লটারি বিক্রেতাকে গুলি করে খুনের ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃতরা সকলেই বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃত বীরেন কর (২৮) রাজগ্রাম, কিরণ রায় ওরফে রাজা (২৫) কৃষ্ণনগর, রামপ্রসাদ কর্মকার ওরফে রাহুল (২০) চামারীবস্তি গোবিন্দনগর ও সুভম সহিস (২০) কদমাপাড়া লোকপুরের বাসিন্দা। আজ ধৃতদের বাঁকুড়ার সি জে এম কোর্টে তোলা হয় পুলিশি রিমান্ডের প্রার্থনা জানিয়ে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২২.০৯.২৫ আনুমানিক রাত ৮.৪৫ নাগাদ বাঁকুড়ার গোবিন্দনগর বাস স্ট্যান্ডে লক্ষ্মীকান্ত গরাই (২৬ বছর) কে গুলি করে হত্যা করা হয়। মৃতের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৩.০৯.২৫ বাঁকুড়া থানায় খুন ও অস্ত্র আইন মামলা দায়ের করা হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল রাতে এই ৪জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুষ্কৃতি চক্রের দ্বন্দ্বে এই খুন বলেই আশঙ্কা করেন স্হানীয় ব্যবসায়ীরা।
বাঁকুড়ার গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ড ক্রমেই দুষ্কৃতিদের স্বর্গ রাজ্যে পরিণত হয়েছে এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। মৃত লক্ষ্মীকান্ত গরাই পুলিশের খাতায় দাগি অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত ছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ, সে গোবিন্দনগর এলাকায় নেশার সামগ্রী বিক্রি করত। ওই কারবারে জড়িত অন্য গোষ্ঠীর বা তার গোষ্ঠীর লোকজন তাকে গুলি করে খুন করে থাকতে পারে। তদন্তকারী পুলিশ কর্মীরা এসব খতিয়ে দেখছে। এদিকে ঘটনার চারদিন পর প্রমাণ সহ পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করাতে স্থানীয় মানুষ স্বস্তি বোধ করছেন। তাদের আশা, এবার হয়তো শান্ত হবে এলাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার গভীর রাতে গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ড চত্বর থেকে লক্ষ্মীকান্তের দেহ উদ্ধার হয়। তার মাথায় গুলির ক্ষত ছিল। সে দিনের বেলায় বাসস্ট্যান্ডে লটারি বিক্রি করত। লটারির দোকানকে ঢাল করে চালাত বেআইনি কারবার। মদ, গাঁজা সহ নেশার জিনিস বিক্রি করত। নেশার সামগ্রী বিক্রির অভিযোগে সে এর আগে পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হয়েছিল। লক্ষ্মীকান্তের ওপর পুলিশের কড়া নজর থাকায় সে কিছুটা দমে যায়। সেই সুযোগে অন্য গোষ্ঠীর লোকজন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তারাও নেশার সামগ্রী বিক্রি করে। সেই গোষ্ঠী নেশার সামগ্রী বিক্রির বাজার দখল করার চেষ্টা করায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে লক্ষ্মীকান্ত গোষ্ঠী। তা থেকে দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ চলছিল। সেই কারণে খুন বলে পুলিশের একাংশ মনে করছে। সেই সূত্র ধরেই সাফল্য পায় পুলিশ।
বাঁকুড়া জেলা পুলিশ আধিকারিকদের প্রথম থেকেই অনুমান ছিল যে দুই দুষ্কৃতি দলের মুখোমুখি গুলির লড়াই হয়নি, কারণ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোল সেভাবে পাওয়া যায়নি। লক্ষ্মীকান্তকে একা পেয়ে গুলি করা হয়ে থাকতে পারে। সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করে জেরা চালায় পুলিশ। বেশ কিছু দিন পর ফের শহরের বুকে গুলি চালিয়ে এক দুষ্কৃতীকে খুনের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শহরে।

