পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ অক্টোবর: একদা মাওবাদী অধ্যুষিত জঙ্গল মহলের পিড়াকাটায় এই প্রথম হল বিগ বাজেটের দুর্গাপুজো। পুজোর পরিচালনায় রয়েছে পিড়াকাটা বাজার দুর্গাপুজো কমিটি। প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি হচ্ছে দুর্গা প্রতিমা ও মণ্ডপ। ঠাকুর দেখার জন্য উৎসাহী হয়ে রয়েছে এক সময় মাও-আতঙ্কে থাকা পিড়াকাটার মানুষ।
নবমীর দুপুরে প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে উপেক্ষা করে মানুষের ঢল চোখে পড়ার মতোন।
জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের আতঙ্ক একসময় স্থানীয়দের রোজকার জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছিল৷ ব্যতিক্রম ছিল না পশ্চিম মেদিনীপুরের পিড়াকাটায়৷ সকাল থেকে রাত, মাও-আতঙ্ককে সঙ্গী করেই বেঁচে থাকতেন সেখানকার মানুষজন। প্রায় নিত্যদিনই শোনা যেত গুলির শব্দ। বাতাসে মিশে থাকত বারুদের গন্ধ। গামছায় মুখ ঢেকে এলাকায় ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছিল হার্মাদ আর মাওবাদীরা। নিরীহ মানুষজনকে তুলে নিয়ে গিয়ে গুলি করে খুন কিংবা ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনাও নেহাত কম ঘটেনি। মাওবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে সিধু সরেন সহ পাঁচজনকে এনকাউন্টার করেছিল পুলিশ। মানুষের জীবন থেকে কার্যত মুছে গিয়েছিল উৎসবের আনন্দ। দুর্গাপুজোয় দল বেঁধে ঠাকুর দেখতে যাওয়া ভুলতে বসেছিল সেখানকার মানুষ। কিন্তু পালাবদলের পর পিড়াকাটা আর আগের অবস্থায় নেই। এখন বারুদের গন্ধ দূরস্ত, ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়নি পিড়াকাটায়। যাদের মধ্যে উৎসবের আনন্দ মুছে গিয়েছিল একসময়, তারাই ফের নতুন করে উৎসবে মেতে উঠবে এই দুর্গাপুজোয়।

এই নিয়ে পাঁচ বছরে পা দিল পিড়াকাটা বাজার কমিটির দুর্গাপুজো। কমিটির সভাপতি প্রবীর কুমার সাউ। সম্পাদক সমিত দাস। করোনা কারণে গত দু’বছর সেইভাবে দুর্গাপুজোয় মেতে উঠতে পারেনি এখানকার মানুষজন। কিন্তু এবছর প্রত্যেকের মধ্যেই উৎসাহ তুঙ্গে। গত দুমাস আগে থেকেই প্রায় ৩৫ যান শ্রমিককে নিয়ে মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন বেলদার শিপল্পী পবন দে। সম্পূর্ণ কাঁচ ও ঝিনুক দিয়ে তৈরি হচ্ছে পুজো মণ্ডপ। সামনে দেখে দেখলে মনে হবে যেন একটি ময়ূর পেখম মেলে রয়েছে। কাঁচ দিয়েই তৈরি হচ্ছে মায়ের প্রতিমা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুর্গাপুজোর ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত টানা পাঁচদিন ধরে থাকছে বিচিত্র সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বস্ত্র বিতরণও পাশাপাশি নবমীর দিন প্রায় সাত হাজার মানুষের জন্য খাওয়াদাওয়ার আয়োজন থাকছে।
পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য পরিমল ধল বলেন, বাজারের প্রায় সমস্ত ব্যবসায়ী মিলেই এই দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছি। এই গ্রাম্য এলাকায় এধরনের বিগ বাজেটের পুজো এই প্রথম হতে চলেছে।

