জে মাহাতো, আমাদের ভারত, মেদিনীপুর, ৪ মে: মেদিনীপুর শহরে অবস্থিত পাহাড়িপুর বালিকা বিদ্যালয়ের গৌরবময় ১২৫ বর্ষ পূর্তি উৎসবের সমাপ্তি হলো মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। ১২৫ বছর উদযাপনের সমাপ্তি পর্বের তিন দিনের অনুষ্ঠানের সূচনা হয় রবিবার সকালে। রবিবার বিভিন্ন ট্যাবলো, ছৌনৃত্য, রণপা সহযোগে একটি বর্ণাঢ্য প্রভাত ফেরি বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা পরিক্রমা করে। সূচনা লগ্নে জাতীয় পতাকা ও বিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করা হয়। শোভাযাত্রা শেষে আখ্যানমঞ্জরী সভাগৃহে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠানের সূচনা করেন মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সম্পাদক অমর্ত্যানন্দজি মহারাজ। স্বাগত বক্তব্যে বিদ্যালয়ের ইতিহাস ও উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাধারানী খাঁড়া। পাশাপাশি তিনি একটি ফুটব্রিজের জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন এছাড়াও বিদ্যালয়ের আরও উন্নয়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো, পুরপ্রধান সৌমেন খান, অধ্যাপিকা অঞ্জনা মাহাতো, বিষ্ণুপুর রামানন্দ কলেজের অধ্যক্ষা ড: স্বপ্না ঘোড়ুই, অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রকাশ সরকার, সাহিত্যিক বিনোদ মন্ডল, বিদ্যালয়ের সভাপতি মৃণাল কান্তি চৌধুরী, চিকিৎসক ডাঃ সুহাস রঞ্জন মন্ডল প্রমুখ প্রমুখ। এদিন ১২৫ বছর স্মরণে নির্মিত একটি স্মারক গেটের উদ্বোধন হয় পাশাপাশি বিদ্যাসাগর ও রবীন্দ্রনাথের মর্মর মূর্তির আবরণ উন্মোচন করা হয়। সোমবার দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় শহিদ প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে। এদিন বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপন করা হয়। এদিন ছাত্রীদের দ্বারা উপস্থাপিত গীতিনাট্য “চন্ডালিকা” উপস্থিত সকলের বিশেষ প্রশংসা কুড়িয়ে নেয়। পাশাপাশি এদিন সংবর্ধনা জ্ঞাপন ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এদিন ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে অংশ নেন মিড-ডে মিলের সহায়িকা দিদিরা। এদিনের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিষই, রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জয়শ্রী লাহা, জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক বরুণ মন্ডল, কবি তাপস মাইতি, অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক পৌলমী সাউ প্রমুখ।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠানের শেষ দিন প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা বিধায়ক উত্তরা সিং হাজরা, এমকেডিএ’র চেয়ারম্যান বিধায়ক দীনেন রায়, সমাজসেবী প্রদ্যোত ঘোষ, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ কৃপাসিন্ধু গাঁতাইত, বিষ্ণুপর রামানন্দ কলেজের অধ্যক্ষ ড: স্বপ্না ঘোড়াই, জেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক চাপেশ্বর সর্দার, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রশাসক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী কৌস্তভ বন্দ্যোপাধ্যায়, ছড়াকার প্রদীপ দেব বর্মণ, বিদ্যালয়ের সভাপতি মৃণাল কান্তি চৌধুরী প্রমুখ। এদিন বিদ্যালয়ের প্রাক্তনীরা ও অতিথি শিল্পীরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেন। মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপহার দেন সঙ্গীত শিল্পী মধুশ্রী হাতিয়াল, আবৃত্তি শিল্পী বিশ্বজিৎ কুন্ডু, বাচিক শিল্পী দেবাশীষ দন্ড প্রমুখ। শেষ লগ্নে হলদিয়ার ‘সংশপ্তক’ নাট্য সংস্থা কুনাল নন্দের তত্ত্বাবধানে জয়ন্ত চক্রবর্তীর লেখা, যুগজিৎ নন্দর নির্দেশিত “মাতাদোর” নাটকটি উপস্থাপিত করে। নাটক উপস্থিত সকলের মন জয় করে নেয়। অভিভাবক ও শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতা অনুষ্ঠানটিকে সর্বাঙ্গসুন্দর করতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি শিখা ঘোড়ই, সুমন্ত দেবনাথ, সুনীতা ভট্টাচার্য, মানসী দে, রেখা গায়েন,পূর্বা রায়সহ বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীবৃন্দ। গোটা অনুষ্ঠানটিতে তবলায় সহযোগিতা করেন সুমন্ত দেবনাথ।
অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাধারানী খাঁড়া। উল্লেখ্য ১২৫ বছর আগে শিক্ষানুরাগী ডাঃ প্যারীলাল দত্ত, অবিনাশ চন্দ্র দত্ত,বাবু উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, গোবিন্দ চন্দ্র দত্তদের নেতৃত্বে এবং অন্যান্যদের সহযোগিতায় এই বিদ্যালয়ের পথচলা শুরু হয়। বিদ্যালয় শুরুর আগে এটি অনুশীলন সমিতির আখড়া কেন্দ্র ছিল।