রামপুরহাটে সিপিএম কর্মীকে খুনের অপরাধে ১২জন তৃণমূল কর্মীর যাবজ্জীবন

আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, বীরভূম, ২২ ডিসেম্বর: রাজ্যে পালা বদলের পর প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএম কর্মীকে পিটিয়ে খুনের অপরাধে যাবজ্জীবন সাজা হল ১২ জন তৃণমূল কর্মীর। শুক্রবার রামপুরহাট মহকুমা আদালতের জেলা দায়রা বিচারক গুরুদাস বিশ্বাস ওই রায় দেন।

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই বীরভূমের রামপুরহাট থানার সৈপুর গ্রামে সিপিএম কর্মী হুমায়ুন মীরকে বাঁশ, লোহার শাবল দিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। খবর পেয়ে পুলিশ গুরুতর জখম অবস্থায় হুমায়ুনকে প্রথমে রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পরের দিন সেখানেই তার মৃত্যু হয়। খুনের ঘটনায় ১৪ জন তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন বোন জেসমিনা খাতুন। মামলা চলাকালীন দুই অভিযুক্তের মৃত্যু হয়। গত বছরের ২০ জুলাই বিচারক ১২ জনকেই দোষী সাব্যস্ত করেন। এদিন তাদের সাজা শোনানো হয়। সাজা প্রাপ্তরা হল ফুলবাস মীর, লিবাস মীর, মীর মহরম, সেতাব মীর, পিন্টার মীর, আবসোর মীর, আমিরুল মীর, গোলাম মীর, নেকবাস মীর, মিঠুন মীর, সুজন শেখ, জানবার শেখ, নয়ন মীর এবং মীর মিলন।

আসামী পক্ষের নিকট আত্মীয় মীর আসগার আলি বলেন, “ভোটের পরের দিন এই ঘটনা ঘটেছে। ফলে ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনৈতিক রঙ লাগানো হয়েছে। সাজাপ্রাপ্তরা নির্দোষ। আমরা ন্যায় বিচারের জন্য উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হব”।

জেসমিনা খাতুন বলেন, “ওদের ফাঁসি হলে খুবই খুশি হতাম। তবে বিচারক যে রায় দিয়েছেন তাতেই আমরা খুশি। এখনও আতঙ্কে আছি। এই রায়ের পর সম্ভবত আর গ্রামে থাকতে পারব না”।

হুমায়ুনের বাবা আসগর মীর বলেন, “ওরা আমাকে তৃণমূলে যোগদান দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু আমি তাতে রাজি হইনি। ফলে ভোটের পরের দিন রাস্তায় ঘিরে ধরে ছেলেকে পিটিয়ে মেরেছে ওরা। ওদের কয়েকজনের ফাঁসি হলে আমি খুশি হতাম”।

আদালতের বিশেষ সরকারি আইনজীবী অতিন্দ্র কুমার মণ্ডল ওরফে মোহন বলেন, “রাজনৈতিক কারণে এই খুন হতে পারে। তবে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে ঘটনার মূল সূত্রপাত। এরপরেই গ্রামের কয়েকজন মিলে তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে। ঘটনার সময় হুমায়ুনের দুই বোন জাসমিনা খাতুন এবং আসমণি খাতুন তাদের পায়ে ধরে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা কর্ণপাত করেননি। বিচারক উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর ১৪৭, ১৪৮ এবং ৩০২ ধারায় প্রত্যেকের যাবজ্জীবন সাজার রায় শোনান।“

তৃণমূলের মুখপাত্র মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিরোধীরা বলে পুলিশ তৃণমূলের দলদাস। কিন্তু সাজার পর বিরোধীরা আর বলতে পারবে না পুলিশ শুধু তৃণমূলের পক্ষ নিয়ে কাজ করে। তবে আমরা সাজা প্রাপ্তদের পাশে রয়েছি। আমার তাদের হয়ে উচ্চ আদালতে যাব”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *