আমাদের ভারত, ১২ জুন: অঞ্চল পাড়া ফারমার্স প্রডিউসার কোম্পানির উদ্যোগে আজ ধুপগুড়ির অঞ্চল পাড়াতে প্রায় এক হাজার গরিব মানুষ তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে পেরেছ। শুধু তাই নয় আজ তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ। হাঁস-মুরগী, ছাগল, শুয়োর পালন করছেন, কেউ মাছ চাষ করছেন এবং কেউ কৃষিকাজ করছেন। সেগুলো বাজারে বিক্রি করে তারা রোজগার করছেন। আদিবাসী এবং রাজবংশী মিলিয়ে প্রায় এক হাজার পরিবার আজ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছে। দুই বছর ধরে এজন্য ওই এলাকায় কাজ করে যাচ্ছে অঞ্চলপাড়া ফারমার্স প্রডিউসার কোম্পানি।
এটি কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নয়, এরা মূলত কাজ করেন কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের অধীনে। গ্রামের গরিব মানুষের মধ্যে দিয়ে কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্প এরা বাস্তবায়িত করে। কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের সহযোগিতায় অঞ্চল পাড়ার আদিবাসী এবং তপশিলি রাজবংশী সম্প্রদায়ের চাষিদের নিয়ে দু’বছর আগে এরা কাজ শুরু করে। তাদের স্বাবলম্বী করতে কাউকে দেওয়া হয় ছাগল, কাউকে মুরগি, কাউকে চাষের জন্য শস্যদানা এবং মাছ চাষের জন্য চারাপোনা দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় এগুলোর লালন-পালনের জন্য খাবার এবং ওষুধ দেওয়া হয়। এমনকি চাষের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিও দেওয়া হয়।
অঞ্চল পাড়া ফারমার্স প্রডিউসার কোম্পানির ডিরেক্টর সমীর রায় জানান, গত দু বছরে তারা এক হাজার পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে পেরেছেন। কাউকে প্রথমে তারা দিয়েছিলেন দুটি শুয়োর কাউকে দুই থেকে চারটি ছাগল, কাউকে ৩০টা মুরগি দিয়েছেন, যেমন এবার কোটা বেড়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পের অধীনে এবার একটি পরিবারকে ৬০টি করে মুরগি দেওয়া হবে। সমীরবাবু জানান, কোনো চাষি যদি বিক্রি করারব জন্য সমস্যায় পড়েন তাহলে সেটাকে বাজারজাত করার ব্যাপারেও তারা সাহায্য করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়। সেই পরামর্শ দেওয়ার জন্য কর্মশালা করা হয়। অনেক সময় কর্মশালা করা হয় গ্রামে গিয়ে আবার কখনো অন্য জায়গায় করা হয়। সে ক্ষেত্রে তাদের যাতায়াত ভাড়া এবং সেই কর্মশালায় তাদের খাবারও ব্যবস্থা করা হয়। অনেক সময় এই কর্মশালাগুলো সাতদিনের হয়।
এছাড়া তাঁরা আরএকটি উল্লেখযোগ্য কাজ শুরু করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ এনিমেল এন্ড ফিশারিজ সাইন্স ইউনিভার্সিটি ও কেন্দ্রীয় সরকারের পশুপালন বিভাগের সহযোগিতায়। ধুপগুড়ির মল্লিকপাড়ায় এই প্রজেক্ট চলছে। সমীরবাবু জানান, কালো প্রজাতির ছাগলের বংশবৃদ্ধির জন্য তারা এই এলাকাতে বিশেষ প্রকল্প শুরু করেছেন। এই কালো ছাগলের মাংস অতি সুস্বাদু। সেই জন্য প্রায় সাড়ে তিনশ জনের বাড়িতে তারা কালো ছাগলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য পাঠা বিলি করেছেন। কালো ছাগলের সঙ্গে অন্য কোনও প্রজাতির মিশ্রন চলবে না। এই প্রকল্পে শুরু হওয়ার পর ওই এলাকায় এখন বংশবৃদ্ধি হয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কালো ছাগল হয়েছে। এই ছাগল তাঁরা বাজারে বিক্রি করে রোজগার করছে। সমীরবাবু জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তাঁদের সহযোগিতা করছেন প্রজনন বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী ড. মনোরঞ্জন রায়। তিনি ওয়েস্টবেঙ্গল অ্যানিমেল অ্যান্ড ফিশারিজ সায়েন্স ইউনিভার্সিটি অধ্যাপক। তাঁর সহযোগিতা এবং পরামর্শ নিয়ে তাঁরা এগিয়ে চলেছেন।