আমাদের ভারত, ১৬ নভেম্বর: যখন আপনার মন প্রশান্ত তখন যেটা আপনি ভাবেন, তা হল সুস্থ শরীর এবং শরীরের সুন্দর একটা গঠন। ভালো তৃপ্তি যুক্ত যৌন মিলন থেকে আপনি অবশ্যই এসব পেতে পারেন। যৌন মিলন বিবিধ ভাবে আপনার শরীরের জন্য উপকারী।
যৌন মিলনের উল্লেখযোগ্য কিছু দিক হল:
১. যৌন মিলন দুশ্চিন্তা রোধ করে: যৌন মিলনের একটি বড় সুবিধা হল এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে এবং মোটের উপর দুশ্চিন্তা রোধে সহায়তা করে। স্কটল্যান্ড থেকে প্রকাশিত বায়োলজিক্যাল ফিজিওলজি জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় এ তথ্য পাওয়া যায়।
২৪ জন নারী এবং ২২ জন পুরুষের যৌন কর্মকান্ড নিয়ে এই সমীক্ষা করা হয়। সমীক্ষা চলার সময় তাদের স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঝামেলা যুক্ত কাজ দেওয়া হয়– এ অবস্থায় সফলদের ক্ষেত্রে দেখা যায় শারীরিক মিলনের সময় অন্যদের তুলনায় তারা কম দুশ্চিন্তা বা উদ্ভিগ্ন হন। একই জার্নলে প্রকাশিত অন্য একটি তথ্য থেকে জানা যায়, নিম্ন রক্তচাপ অনেক ক্ষেত্রে নিয়মিত যৌন মিলনে প্রভাব ফেলে। ডাক্তারা আলিঙ্গনের সাথে নারীর নিম্ন রক্তচাপের একটা সম্পর্ক পেয়েছেন।
২. যৌন মিলন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: ভালো যৌন মিলন মানে উন্নত শারীরিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা। সপ্তাহে একবার কিংবা দুইবার শারীরিক মিলনে ইম্যুওনোগ্লোবলিন-এ (সংক্ষেপে IgA ) নামক এন্টিবডি’র স্তর বৃদ্ধি করে, যা আপনাকে ঠান্ডা লাগা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে সক্ষম।
শারীরিক মিলন করেন এমন ১১২ জন মানুষের কাছ থেকে হজমে সহায়তাকারী মুখের লালার নমুনা সংগ্রহ করেন উইলকিস্ ইউনিভার্সিটি, পেনসিলভিনিয়ার বিজ্ঞানীরা। সমীক্ষার সময় এদের কয়েকটি দলে ভাগ করে নেন বিজ্ঞানী।
দলগুলি হল এই রকম:
১. যারা একই সময় নিয়মিত যৌনমিলন করেন।
২. যারা একই সময় যৌনমিলন করেন না।
৩. যারা দুই সপ্তাহ কিংবা মাসে একবার যৌন মিলন করে। ৪. যারা সপ্তাহে তিনবার কিংবা তার বেশি শারীরিক মিলন করেন তাদের লালার নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা করে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা হল – যারা সপ্তাহে ১ বার যৌন মিলন করে তাদের IgA এর স্তর অন্য তিন দলের থেকে অনেক উন্নত।
৩. যৌন মিলনে অতিরিক্ত ক্যালরি দহন হয়:
তিরিশ (৩০) মিনিটের শারীরিক মিলন ৮৫ ক্যালরি কিংবা তারও বেশি দহন করতে পারে। এইভাবে ২১ ঘন্টার মিলনে এক পাউন্ড ওজন কমানো সম্ভব। যৌন মিলন একটি ভালো ব্যয়াম। এর সাহায্যে শারীরিক এবং শরীরবৃত্তীয় উভয়-ই সংঘটিত হয়।
৪. শারীরিক মিলন হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালী রাখে:
অনেক বয়স্ক পুরুষ মনে করেন যৌনমিলন করলে ষ্ট্রোক হবার সম্ভাবনা থাকে। এটি সবসময় সত্য নয়। জার্নাল অব ইপিডিমিউলোজি এন্ড কমিউনিটি হেল্থ এ প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা যাচ্ছে ৯১৪ জন মানুষকে ২০ বছর যাবৎ পর্যবেক্ষন করে যৌন মিলনের সাথে ষ্ট্রোক এর কোনও সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। যৌনমিলনে হৃদপিন্ডের ভালো দিকগুলোর এখানেই শেষ নয়। ওই গবেষনায় আরোও জানা যায়, সপ্তাহে কমপক্ষে দুইবার অথবা ততোধিক শারীরিক মিলনের ফলে প্রাণনাশক হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনার মাত্রা প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনে, যারা সপ্তাহে একবারের কম শারীরিক মিলন করে থাকেন তাদের থেকে।
৫. যৌনমিলন পারষ্পরিক আন্তরিকতা বৃদ্ধি করে। যৌনমিলন করা এবং যৌনমিলনে পুর্নতৃপ্তি অর্জনে মানবদেহের অক্সিটসিন (oxytocin) হরমোনের স্তর বৃদ্ধি করে। অক্সিটসিন হরমোনকে লাভ-হরমোনও বলা হয়ে থাকে। অক্সিটসিন হরমোন স্বামী-স্ত্রী পরষ্পরের প্রতি বিশ্বাস এবং ভালোবাসা শক্তিশালী করে। ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ এবং ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারলিনা’র যৌথ গবেষনায় এমন নারীকে তাদের স্বামীর সাথে উষ্ণ আলিঙ্গনের পুর্বে এবং পরের অবস্থার মুল্যায়ন করেন। ফলাফলে তারা পান, “যত বেশি সংস্পর্শ – তত বেশি অক্সিটসিন হরমোনের স্তর”! এই অক্সিটসিন অনুরোধ করে আরো বেশি আন্তরিক বন্ধনের জন্য। উচ্চ মাত্রার অক্সিটসিনের সাথে সঙ্গীর প্রতি “উদার” অনুভুত হবার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। তাই যদি মাঝে মাঝে আপনি আপনার সঙ্গীর প্রতি উদার মনোভাবের অনুভতি অনুভব করেন তবে তার কৃতিত্ব কিন্তু এই অক্সিটসিন তথা লাভ-হরমোনের
৬. শারীরিক মিলন আত্মসম্মানবোধের উন্নতি সাধন করে। যৌনমিলনের ২৩৭ টি কারনের মধ্যে আত্মসম্মানবোধের উন্নয়নও মিলনের একটি উল্ল্যেখযোগ্য কারন – ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের গবেষক দলের উদ্ভাবিত “আর্কাইভ অব সেক্সুয়াল বিহেভিয়্যর” জার্নালে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। জিনা অগডোন (পিএইচডি) নামের ক্যামব্রিজের একজন সেক্স থেরাপিষ্ট বলেন, যেসব মানুষের আত্মসম্মানবোধ অন্যের তুলনায় ভালো– তারাও অনেকসময় আরো বেশি মানসিক প্রশান্তির প্রত্যাশায় মিলন করে থাকেন। তার মতে ভালো মানের যৌনমিলনের শুরুই হয় আত্মসম্মানবোধের দৃঢ়তার ভিত্তিতে এবং এটার ক্রমঃউন্নয়ন হয় – যদি শারীরিক মিলনের সাথে ভালবাসার সংযুক্তি থাকে। তিনি আরো বলেন, অনেক মানুষ তার সাথে আলোচনায় উল্ল্যেখ করেন যে নিজের সম্পর্কে পজিটিভ ধারনা জাগানোর লক্ষ্যে তারা অনেক সময় যৌনমিলন করে থাকেন।
৭. যৌনমিলন ব্যথা নিরাময় করে:
অন্তরঙ্গতার ফলে যখন অক্সিটসিন (oxytocin) হরমোন প্রচন্ড তরাঙ্গায়িত হয় তখন ইনড্রোপিন হরমোনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, ইনড্রোপিন কার্যকরী ব্যথানাশক – ফলে প্রাকৃতিক ভাবেই যন্ত্রনা হ্রাস পায়। তাই যদি আপনার মাথাব্যথা, গেটে বাতের ব্যথা সহ অন্য শারীরিক ব্যথা থাকে তাহলে যৌনমিলনের পর ইনড্রোপিন তা কমিয়ে আনবে। বুলেটিন অব এ্যক্সপেরিমন্টাল বায়োলজি এন্ড মেডিসিনের এক প্রবন্ধে উল্ল্যেখ করা হয়, ৪৮ জন সেচ্ছাসেবককে শ্বাসের মাধ্যমে অক্সিটসিনের বাষ্পীয় রূপ সেবন করানো হয় এবং তাদের হাতের আঙুল মচেকে দেয়া হয়। অক্সিটসিন ক্রিয়াশীল অবস্থায় তাদের ব্যথার অনুভুতি প্রায় অর্ধেক পাওয়া গিয়েছে।
৮. শারীরিক মিলন মুত্রাশয় এবং মুত্রনালীর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়:
নিয়মিত বীর্যপাত, বিশেষ করে ২০ উর্দ্ধ বয়সের পুরুষের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে (বয়স্ক অবস্খায়) মুত্রাশয় এবং মুত্রনালীর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। অষ্ট্রেলিয়ার গবেষকদলের তথ্য মতে (ব্রিটিশ জার্নাল অব ইউরোলোজি ইন্টারন্যাশনালে প্রকাশিত) যখন তারা প্রোষ্টেট ক্যান্সার রোগী এবং সাধারন (রোগমুক্ত) পুরুষের রোগ নির্নয়ের পরীক্ষা করেন, তখন তারা মুত্রাশয় এবং মুত্রনালীর ক্যান্সারের সাথে ৩০, ৪০ এবং ৫০ বছর বয়সে শারীরিক মিলনের হারের বড় একটি সম্পর্ক আবিষ্কার করেন। যেসকল পুরুষ ২০ ঊর্দ্ধ বয়সে সপ্তাহে পাঁচ অথবা ততোধিক বীর্যপাত ঘটিয়েছেন তাদের মুত্রাশয় এবং মুত্রনালীর ক্যান্সারের ঝুকি ৩৩% কম। অর্থাৎ কম শারীরিক মিলন মানে বেশি মুত্রাশয় এবং মুত্রনালীর ক্যান্সারের ঝুঁকি। অন্য একটি গবেষণায় ডাক্তাররা বলেন, মাসে ২১ বার কিংবা ততোদিক যৌনমিলনের ফলে বৃদ্ধ বয়সে মুত্রাশয় এবং মুত্রনালীর ক্যান্সারের সম্ভাবনা ২১ বারের কম এমনকি চার থেকে সাত বার মিলনকারীদের চেয়েও ৩৩% ভাগ কম।
৯. যৌনমিলন পিলভিক প্লোর পেশী (নারী এবং পরুষের গোপনাঙ্গের কাছে অবস্থিত পেশী যা শারীরিক মিলনে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখে) শক্তিশালী করে:
নারীর জন্য, শারীরিক মিলনের সময় সামান্য পরিমান কিগ্যিল তথা পিলভিক প্লোর ব্যয়ামে নানাবিধ উপকারিতা দেখা যায়। এতে অধিক আনন্দ (pleasure) উপভোগের সাথে যৌনাঙ্গ টাইট করা সহ অধিক বয়সে অন্য নারীর তুলনায় বেশি সুস্থ্য থাকবেন। সাধারন কিগ্যিল ব্যয়ামের জন্য মিলনকালে পিলভিক পেশীকে সংকুচিত করে ধরুন যেমনটি প্রস্রাবের গতি রোধ করার জন্য করে থাকেন। সংকুচিত অবস্থায় এক থেকে তিন পর্যন্ত গুনুন এবং তার পর ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক হউন। একই নিয়মের পুনরাবৃত্তি করুন ১০ বার।
১০. শারীরিক মিলন নিরবচ্ছিন্ন নিদ্রা নিশ্চিত করে: মিলনে পূর্নতৃপ্তিতে যে অক্সিটিসন হরমোন নিঃসৃত হয় তা পরবর্তিতে ঘুমে সহায়তা করে। পর্যাপ্ত ঘুমের সাথে অন্যান্য শারীরিক সুবিধা যেমন সঠিক ওজন এবং রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখে। আপনি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করবেন শারীরিক মিলন শেষে অল্প কিছুক্ষনের মাঝেই মিলনকারী নারী-পুরুষ গভীর নিদ্রায় মগ্ন হয়ে যায়।