আমাদের ভারত, কলকাতা, ১০ এপ্রিল: বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখের দিন ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বার্তা দিতে বাংলার মানুষের দোরগোড়ায় হাজির মঙ্গল শোভাযাত্রা। প্রতি বছরের মত এই বছরও (১৪৩১) দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলি বাগান থেকে যাদবপুর পর্যন্ত শোভাযাত্রা হবে।
পহেলা বৈশাখের দিন (রবিবার) সকাল আটটায় শোভাযাত্রা শুরু হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রা গবেষণা ও প্রসার কেন্দ্র, পশ্চিমবঙ্গ-এর উদ্যোগে অসাম্প্রদায়িক বাঙালিয়ানার এই উৎসবকে সফল করতে ইতিমধ্যেই জোর কদমে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় দেখানোর জন্য শিল্পকর্মের কাজ চলছে পাটুলির কিশোর বাহিনী ভবনে। এবারের শিল্পকর্মে থাকছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বিষ্ণুপুরের বোঙা হাতি, মৎস্যকন্যার আদলে বাংলার নৌকা, ট্যাপা পুতুল। আরো থাকছে বিভিন্ন রঙের কারুকার্যবাহী মুখোশ। তারই কাজ জোর কদমে চালিয়ে যাচ্ছেন শিল্পীরা।
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা উদ্বোধন করবেন লুপ্তপ্রায় হাপু গানের শিল্পী তারা সুন্দরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, ভাষাবিদ ড. পবিত্র সরকার, লোকায়ত বেহালা শিল্পী রহমত আলী সহ সংস্কৃতি ও ক্রীড়া জগতের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার অন্যতম শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ বাংলার লোকসংস্কৃতি মুর্শিদাবাদের লাঠি খেলা।
মঙ্গল শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে পহেলা বৈশাখের আগের দিন রাতে রাস্তা জুড়ে আলপনা দেন শিল্পীরা। এবারেও তার ব্যতিক্রম হবে না। রাতজাগা আলপনা মঙ্গল শোভাযাত্রাকে এক বিশেষ মাত্রা দেবে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। উদ্যোক্তারা আরোও মনে করছেন, বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী, নাটকের দল, গানের দল, নাচের দল সহ অগণিত মানুষের অংশগ্রহণে এবারের মঙ্গল শুভযাত্রা জনপ্লাবনে ভেসে যাবে।
ইউনেস্কো বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে মানবতার অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দিয়েছে ২০১৬ সালে। ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুরে যে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়েছিল আজ তা কার্যত বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। মঙ্গল শোভাযাত্রা পশ্চিমবঙ্গে এবছর অষ্টম বর্ষে পদার্পণ করবে।
ইতি মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এই আনন্দঘন উৎসব ছড়িয়ে পড়েছে। কোচবিহারের দিনহাটা থেকে রায়গঞ্জ, বহরমপুর, কল্যাণী, মধ্যমগ্রাম, শ্রীরামপুর, সল্টলেক, নদীয়ার বাদকুল্লা, নিউটাউন, ঢাকুরিয়া, নামখানা সহ নানা জায়গায় এখন এই উৎসব হয়।
মঙ্গল শোভাযাত্রা গবেষণা ও প্রসার কেন্দ্র, পশ্চিমবঙ্গের সম্পাদক বুদ্ধদেব ঘোষ জানিয়েছেন, আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গের সব জেলায় এই উৎসব ছড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি।