মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি! ”রাজ্যপাল কি শুধুই মনোনীত? তাঁকে তুচ্ছ, অবজ্ঞা করার অধিকার মমতা ব্যানার্জির নেই”

তপন কুমার ঘোষ
আমাদের ভারত, ২৪ এপ্রিল: শুরু থেকেই ছিল, করোনা ভাইরাস ও লক ডাউন নিয়ে জিনিসটা আরো নোংরা রূপ ধারণ করল। পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্ক, এক্তিয়ার এবং রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা। শুধু দুজনের মধ্যে নোংরামি হলে কিছু বলার ছিল না। কিন্তু এই কঠিন পরিস্থিতিতে এই দড়ি টানাটানি ও নোংরামিতে যে মানুষের প্রাণ যেতে বসেছে। তাই আমার বক্তব্য জানাচ্ছি।

মমতা ব্যানার্জী আগেও অনেকবার বলেছেন, এবং এখনো বার বার বলছেন যে তিনি নির্বাচিত এবং রাজ্যপাল মনোনীত। সুতরাং রাজ্যপালকে কাঠের ঠাকুর হয়ে থাকতে হবে। কোনকিছুতে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। পশ্চিমবঙ্গে সব কিছু করার অধিকার শুধু রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর আছে।

মমতা ব্যানার্জী র এই দাবীটা যথার্থ কিনা একটু পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কোন্ দাবিটা? মমতা নির্বাচিত এবং রাজ্যপাল মনোনীত।
পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তো মমতা ব্যানার্জিকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত করেনি! আমাদের দেশে সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি নির্বাচন হয় না। জনসাধারণ এমএলএ এবং এমপি নির্বাচিত করে। এমএলএ–রা মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন করেন এবং এমপি–রা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করেন।পশ্চিমবঙ্গে ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে TMC দল অধিক সংখ্যক এমএলএ জিতে সরকার গঠন করেছে। তাদের জন সমর্থন বেশি। কিন্তু তার পরে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি দল সারা দেশে জিতে কেন্দ্রে সরকার গঠন করেছে এবং নরেন্দ্র মোদী’কে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছে ঠিক সেই পদ্ধতিতে যে পদ্ধতিতে মমতা ব্যানার্জি এই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। এবং শুধু সারা দেশে নয়, এই পশ্চিমবঙ্গেও লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি দল ৪৩% সিটট এবং ৪০% ভোট পেয়েছে। মমতা ব্যানার্জির দল পেয়েছে ৫২% সিট এবং ৪৩% ভোট। অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদীর দল সারা ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে সঙ্গে এই রাজ্যেও ৪০ শতাংশের বেশি জনগণের ভোট ও সিট পেয়েছে।

তাই মোদীজী দেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সংবিধান প্রদত্ত যে ক্ষমতার অধিকারী, তার উপরে এই রাজ্যেও ৪০ শতাংশ জনমতের অধিকারী। তাই সারা দেশের জনমত, সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতা এবং অধিকন্তু এই রাজ্যের জনমত প্রদত্ত ক্ষমতা তাঁর হাতে আছে। সেই ক্ষমতা দিয়ে তিনি যে ব্যক্তিকে চয়ন করে রাজ্যপাল হিসাবে এখানে পাঠিয়েছেন, তাঁকে শুধুই মনোনীত বলে তুচ্ছ, অবজ্ঞা ও অস্বীকার করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং সে অধিকার মমতা ব্যানার্জির নেই। মমতা ব্যানার্জির পিছনে যেমন জন সমর্থন আছে ঠিক তেমনি রাজ্যপালও জন সমর্থনের জোরেই এই রাজ্যে বসে আছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি। প্রধানমন্ত্রী কি নির্বাচিত নন?
তাই মমতা ব্যানার্জিকে আমি একান্তভাবে অনুরোধ করব, সারা দেশের চোখে পশ্চিমবঙ্গকে আর ছোট করবেন না। আপনার এই আচরণকে শিক্ষিত সচেতন মানুষ গা জোয়ারি বলেই মনে করছে। অত্যন্ত অনিচ্ছা সহকারে আপনাকে মনে করিয়ে দিচ্ছি হাওড়া দ্বিতীয় সেতুর টোল প্লাজার কাছে একান্তই দেশের সামরিক প্রস্তুতির প্রয়োজনে রাস্তায় গাড়ি সংখ্যার সার্ভে করা নিয়ে আপনার সেই অযৌক্তিক হিস্টিরিয়াগ্রস্ত আচরণের কথা। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি শুধু আপনার নয়, পশ্চিমবঙ্গের মর্যাদাহানির কারণ হয়ে উঠছে। এ থেকে বিরত হন। কেন্দ্রের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা মূলক আচরণ করুন। বিশেষত এই করোনা মহামারীর সময়। আপনার শুভাকাঙ্খী তপন ঘোষ।
(লেখক, তপন ঘোষ কট্টরপন্থী হিন্দু নেতা)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *